
বর্ষাকাল রচনা সকল ছাত্র ছাত্রীদের জন্য উপযোগী
রচনার পয়েন্ট সমূহঃ
- ভূমিকা
- ঋতুচক্রে বর্ষাকালের স্থান
- বর্ষাকালের আগমন
- সজল বর্ষার বৈশিষ্ট্য
- বর্ষাকালে পল্লীর অবস্থা
- বর্ষাকালে শহরের অবস্থা
- কবি সাহিত্যকদের দৃষ্টিতে বর্ষাকাল
- বর্ষাকালের উপকারিতা
- বর্ষাকালের অপকারিতা
- উপসংহার
ভূমিকা
ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। বর্ষাকাল এদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। গ্রীষ্মের পরই বর্ষাকালের আগমন ঘটে। আষাঢ় এবং শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। বর্ষাকালে বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়।
ঋতুচক্রে বর্ষাকালের স্হান
প্রচন্ড উত্তাপ, অসহ্য গরমের ঋতু গ্রীষ্মের পরেই বর্ষার আগমন। আষাঢ় ও শ্রাবণ এ দু’মাস নিয়ে বর্ষাকাল হলেও বর্ষাকালের গন্ডি শুধু এ দু’মাসে সীমাবদ্ধ নয়। কালবৈশাখীর গুরুগর্জনে তার আগমন সূচিত হয় আর ভাদ্রের ভরা খাল-বিল, নদী-নালা, জলাশয়ে পূর্ণতায় বর্ষার স্থায়িত্ব পরিলক্ষিত হয়। মাঝখানে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বঙ্গ প্রকৃতি তার উন্মত্ত, প্রাণ চঞ্চল রূপের বিচিত্র প্রকাশে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠে।
বর্ষাকালের আগমন
গ্রীষ্মের মেঘমুক্ত আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যায়। প্রচন্ড গর্জনে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়তে থাকে। সূর্যের আলো আর মেঘ লুকোচুরি খেলে। বর্ষার আগমন ঘটে। বর্ষা আসে নব সমারোহে জয়ধ্বনি বাজিয়ে। নীল নব অঙ্গনে নবীন মেঘের সমারোহে, বিদ্যুৎ শিহরণে, অশান্ত বৃষ্টিপাতের শব্দে ঘোষিত হয় বর্ষার আগমন বার্তা। প্রকৃতি যেন নিজের বুক জুড়ানোর জন্য বর্ষাকে নিমন্ত্রণ করে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ষার আগমনকে লক্ষ্য করে লিখেছেন-
“ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে
জল সিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ ভরসে
ঘন গৌরবে নব যৌবনা বরষা
শ্যাম গম্ভীর সারষা।”
সজল বর্ষাকালের বৈশিষ্ট্য
বর্ষার আগমনের সাথে সাথে নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠ-ক্ষেতে পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যায়। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে অনেক সময় দিনের পর সূর্যের দেখা মিলে না। সারাদিন মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে। কবি তাই বলেছেন-
“বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর
আউশের ক্ষেত জলো ভর ভর।
কালিমাখা মেঘে ওপারে আঁধার
ঘনিয়েছে দেখ চাহিরে।”
কখনও বর্ষার প্রচন্ড গর্জনে মুখরিত হয়ে শুরু হয় প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি, দেখা দেয় বন্যা। তখন ফসলের মাঠ তলিয়ে যায়, ঘর বাড়ি, গাছপালা নষ্ট হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালের শুষ্ক নদী মুহুর্তের মধ্যে যৌবন ফিরে পায়।
- বর্ষাকালে পল্লীর অবস্হা
বর্ষাকালে পল্লীর মাঠ-ঘাট জলে ভরপুর হয়ে যায়। নদীর দু’কুল উপছিয়ে পানি গ্রামে প্রবেশ করে। রাস্তাঘাট হয়ে যায় অচল। নৌকা ছাড়া কোথাও যাতায়াত করা যায় না। গ্রাম্য বধুরা বৃষ্টিতে ভিজে পানি আনতে যায়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা পানি ভিজে কলা গাছের ভেলা,কাগজের নৌকা ইত্যাদি ভাসিয়ে আনন্দে মেতে থাকে। শিশুদের অনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বেগম সুফিয়া কামাল বলেছন-
“নব বর্ষায় আবগাহি জলে কভু পুলকিত মনে
গান গাহিয়াছি মল্লার রাগে বাদলের ধারা সনে।”
বর্ষাকালে শহরের অবস্হা
বর্ষাকালের আগমনে শহরের নিম্নাঞ্চল বৃষ্টির পানিতে প্রায়ই ডুবে যায়। উন্নত পানি নিষ্কাশনের ব্যাবস্হা না থাকায় বৃষ্টির পানিতে শহরের রাস্তা ডুবে যায়। পায়ে হেঁটে অফিস -আদালত,স্কুল-কলেজ ও হাট-বাজারে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ সময় রিক্সা স্কুটার চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বাড়ত থাকে। এ সময় মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র বস্তিবাসীদের কষটের সীমা থাকেনা। মোটকথা বর্ষা শহরের লোকজনের কষ্টের কারণ হয়ে দাড়ায়।
কবি সাহিত্যিকদের দৃষ্টিতে বর্ষাকাল
বর্ষা মনকে সতেজ, সরল ও সৃজনশীল করে তোলে। হৃদয়ে বয়ে আনে অফুরন্ত আবেগের প্রবাহ। বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া মানুষের মনকে উদাস করে তোলে। কিসের যেন অভাব,না পাওয়ার বেদনা মানুষকে অভিভূত করে তোলে। মন চায় অজানা কাউকে কাছে পেতে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-
“এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘন ঘোর বারিষায়।”
বর্ষাকালের উপকারিতা
বাংলাদেশের জন্য বর্ষাকাল আশীর্বাদ স্বরূপ। ইহা বাংলাদেশকে নতুন জীবননদান করে। বর্ষাকালে কৃষকেরা আউশ ধান ঘরে তোলে। বাংলাদেশের প্রধান অর্থকারী ফসল পাট বর্ষষাকালেই কৃৃৃৃৃষকের ঘরে আসে। এ সময়ে ফজলী আম, আনারস, পেয়ারা, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, উচ্ছে, পুইশাক, চিচিঙ্গা ইত্যাদি ফসল ও সবজির সম্ভার দেখা যায়। বর্ষার ভরানদী উর্বর পলিমাটি বহন করে ভূমিকে উর্বর করে। এ সময় বাগানে বেলী, কামিনী, রজনীগন্ধা, কদম, জুঁই, টগর প্রভৃতি ফুলের মিষ্টি গন্ধ মন ভরিয়ে দেয়। সত্যিকার অর্থে বর্ষা বাংলাদেশকে সুুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা করে দেয়।
বর্ষাকালের অপকারিতা
বর্ষাকালের কিছু কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে ফসল নষ্ট হয়, ডুবে যায় রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি। অনেক সময় অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পর পরই শুরু হয় অভাব ও অনটন ও নানা ধরনের রোগবালাই। বর্ষাকালে অধিক পরিমাণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এ সময় জিনিসপত্রের দাম অধিক হারে বেড়ে গরীব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। শুধু তাই নয় বর্ষাকালে গবাদী পশু নিয়ে কৃষকের কষ্টের সীমা থাকে না।
উপসংহার
বাংলার বর্ষা রূপ-বৈচিত্র্যে তুলনাহীন। বর্ষা বাংলাদেশের একান্ত নিজস্ব সম্পদ। বর্ষার সাথে আমাদের প্রাণের সম্পর্ক বিদ্যমান। ভালোবাসার উষ্ণ-স্পর্শে তা সজীব। বর্ষার এক হাতে বরাভয়,অন্য হাতে বরাভয়, অন্য হাতে ধ্বংসের প্রলয়মেবু। এক পক্ষঘাতে সৃজনের প্রাচুর্য,অন্য পক্ষাঘাতে ধ্বংসের তান্ডব। এক চোখে অশ্রু, অন্য চোখে হাসি। বর্ষার মধ্যে কবি খুঁজে পান পূর্ব মেঘের গান আর উত্তর মেঘের সংবাদ। বর্ষা চিরদিনই মানুষের কাছে নতুনত্বের ‘আক্রান্ত’ এবং পুরানত্বের ‘পুঞ্জীভূত’। তাই বর্ষা বাঙ্গালীর কাছে চির আদরের ঋতু, চিরবেদনার ঋতু ও চির কাঙ্ক্ষিত ঋতু।
আমাদের প্রকাশিত আরও রচনাসমূহ-

3 Comments
Pingback:
Pingback:
Pingback: